আকাশ রহমান,স্টাফ রিপোর্টারঃ ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের এক সরকারী কর্মকর্তার চাষ করা ‘ফাতেমা’ জাতের ধান ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। এর প্রতিটি শীষে পাওয়া গেছে প্রায় এক হাজারটি ধান। দেশে উৎপাদিত প্রচলিত জাতের ধানের চেয়ে এই ধানের ফলন প্রায় তিনগুণ। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার জগন্নাতপুর ইউনিয়নের সৌখিন কৃষক এবং ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা সমবায় অফিসার রেজাউল করিমের ওই ধান দেখতে এবং কিনতে বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ ভিড় জমাচ্ছে তার বাড়িতে।

রেজাউল করিম পেশায় একজন সদর উপজেলা সমবায় অফিসার । একই সঙ্গে আধুনিক চাষাবাদে রয়েছে তার ব্যাপক আগ্রহ। গতানুগতিক কৃষির পরিবর্তে নতুন জাতের এ ধান উৎপাদনে তিনি সাফল্য পেয়েছেন। লাভজনক হওয়ায় তার মতো এলাকার অনেকেই এখন নতুন এ জাতের ধান চাষের জন্য আগ্রহ দেখাচ্ছেন। জেলা কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, এত অধিক ফলনশীল জাতের ধান দেশের আর কোথাও আছে বলে তাদের জানা নেই। ‘ফাতেমা’ জাতের এই ধান কোন জাতের এবং কোথা থেকে কিভাবে এলো এসব জানতে গবেষণার কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন, মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট।

দেখতে ব্রি-২৮ ধানের মতো এর জাতের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করে রেজাউল করিম জানান, অন্য ধানের মতোই এ ধানের চাষ পদ্ধতি। আউশ, আমন ও বোরো তিন মৌসুমেই এ ধানের চাষ করা যায়। তবে বোরো মৌসূমে এর উৎপাদন সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে। গাছের উচ্চতা প্রায় ৫ফিট যা অন্য ধানের তুলনায় বেশি। গাছগুলো শক্ত হওয়ায় হেলে পড়ে না। আর এক একটি ধানের শীষে ৭৫০-৯০০টি করে ধান হয়। সাধারণ ধানের তুলনায় তিন থেকে চার গুণ বেশি। ফলে এর উৎপাদনও অনেক বেশি। চলতি মৌসূমে তিনি বিঘা প্রতি ৩২ মণ ধান পেয়েছেন। তিনি ফাতেমা জাতের ধান চাষ করছেন এক বিঘা এবং গ্রিন সুপার রাইচ চাষ করছেন দেড় বিঘা। এ ধানে রোগ ও পোকামাকড়ের হার তুলনামূলক কম। এছাড়া চাল খুব চিকন ও ভাতও খেতে খুব সুস্বাদু। তিনি জানান, বীজপাতা তৈরি করার পর ১৫০ থেকে ১৫৫ দিনের মধ্যে ধান কাটা যায়। এই ধান ঝড়, খড়া এবং লবণাক্ততা সহনীয়। ওই জাতের প্রতিটি ধানগাছের দৈর্ঘ্য ১১৫ থেকে ১৩০ সেন্টিমিটার, গুছি গড়ে আটটি, প্রতিটি ধানের ছড়ার দৈর্ঘ্য ৩৬ সেন্টিমিটার, গড়ে দানার সংখ্যা এক হাজারের ওপরে। রেজাউল করিম আরও বলেন ঠাকুরগাঁও জেলায় এই প্রথম ফাতিমা জাতের ধান চাষ আমি করছি। আমি ইউটিউব এর মাধ্যমে জানতে পারি এই ধান সম্পর্কে তারপর ঢাকা থেকে বীজ সংগ্রহ করছি। বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা কৃষক লিটন, রঞ্জু, মামুন, আতাব আলী জানান, অনেক ফলন হচ্ছে শুনে তারা কৃষক রেজাউল করিমের এ ধান দেখতে এসেছেন এবং তার কাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করার আগ্রহ প্রকাশ করছেন। আগামীতে তারা এ ধান চাষ করবেন। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মেরিনা সুলতানা বলেন, রেজাউল করিম ভাই যে ফাতেমা জাতের ধান চাষ করে এলাকায় আলোরণ সৃষ্টি করেছেন। তার ধানের ফলন দেখে আরও অনেক কৃষক ফাতেমা জাতের ধান চাষ করতে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। কৃষক এরকম উন্নত জাতের ধান চাষ করলে আমরা অবশ্যই সঠিক পরামর্শ দিবো। উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষ্ণ চন্দ্র বলেন, ‘ওই ধানের ফলন শুধু দেশে নয়, গোটা বিশ্বকে তাক লাগাতে পারে। এত বেশি ফলন পাওয়া যায়, এমন কোনো জাতের ধান দেশে আছে বলে আমার জানা ছিল না । তিনি বলেন, এই ধান খড়া ও লবণ সহ্যকারী এবং সারাদেশে চাষের উপযোগী। মনে হচ্ছে, সারা দেশে ওই ধান চাষ করা যাবে। এই ধান যদি সারা দেশে চাষ করা যায় তাহলে বার্ষিক উৎপাদন পাঁচ কোটি টন ছাড়িয়ে যাবে।